ডেঙ্গুজ্বরঃ
ডেঙ্গুজ্বর কনটেন্টটিতে ডেঙ্গুজ্বর কী, কীভাবে ছড়ায়, ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ, উপসর্গ, ডেঙ্গুজ্বরের ধরন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা, পথ্য ও বাড়তি সতর্কতা, প্রতিরোধ এই সব বিষয়গুলো সর্ম্পকে বর্ণনা করা হয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বর মৃদু বা হাল্কা থেকে মারাত্মক ধরনের হয়ে থাকে। মৃদু ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে তীব্র জ্বর, শরীরে লালচে দানা এবং মাংসপেশী ও হাড়ে ব্যথা হয়। মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরে (ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) মারাত্মক রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ কমে যাওয়া এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বর কি
ডেঙ্গুজ্বর একধরনের জীবাণু বাহিত একটি রোগ। ডেঙ্গুজ্বরের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই এবং অধিকাংশ রোগীই আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু রোগের মারাত্মক ধরনে আক্রান্ত হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে।
কিভাবে হয়
এডিস নামে এক ধরনের মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। এই মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়।
ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে কি করে বুঝবেন
রোগের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ ভিন্ন হয়ে থাকে। ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হলো-
তীব্র জ্বর-১০৫ ফারেনহাইট(৪০.৬ সে.) পর্যন্ত।
সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা যা কিছুদিনের জন্য চলে গিয়ে পুনরায় দেখা দেয়।
তীব্র মাথা ব্যথা, পিঠ ব্যথা অথবা দুটোই।
চোখের পিছনে ব্যথা।
অস্থি সন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা।
বমি বমি ভাব এবং বমি।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর
এটি রোগের মারাত্মক একটি ধরণ। এই জ্বর মৃদু জ্বরের মতোই শুরু হয়। পরবর্তী কিছু দিনের মধ্যেই অবস্থা অধিকতর খারাপ হতে শুরু করে। এই জ্বরে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যা গুলো হয়-
রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী রক্ত কোষের সংখ্যা কমে যায় ফলে
চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয় এবং নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়।
অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
এটি ডেঙ্গুজ্বরের সবচেয়ে মারাত্মক ধরন। এই জ্বরে মৃদু ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি অন্যান্য যে সমস্যা গুলো হয়-
তীব্র পেটে ব্যথা
ঘন ঘন বমি
জ্ঞান হারানো
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
কখন ডাক্তার দেখাবেন
ডেঙ্গুজ্বরের যে কোন লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
কোথায় চিকিৎসা করা হয়
জেলা সদর হাসপাতাল
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বেসরকারী হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
কি কি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে
সাধারণত লক্ষণ দেখেই ডাক্তাররা বুঝতে চেষ্টা করেন ডেঙ্গু হয়েছে কিনা,তবে এর পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে। রক্ত পরীক্ষা করে রোগের ধরন ও মাত্রা বুঝা হয়।
কি চিকিৎসা আছে
বেশি করে তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহন
প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন
হাসপাতালে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা
দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেয়া
রক্তচাপ পরীক্ষা
রক্ত ঘাটতি পূরণের জন্য রক্ত দেয়া
পথ্য ও বাড়তি সতর্কতা
বমি এবং জ্বর থেকে পানিশূণ্যতা পূরণের জন্য রোগীকে বেশি করে স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
আক্রান্ত রোগীকে মশারীর ভিতর রাখতে হবে।
কখনোই নিজে থেকে কোন ব্যথানাশক ঔষধ খাবেন না, তাতে ডেঙ্গুজ্বরের জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করবেন
ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহনকারী মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই দিনের বেলা মশারী টাঙিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সবসময় মশারীর মধ্যে রাখতে হবে যাতে করে রোগীকে কোন মশা কামড়াতে না পারে।
বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
বাড়ির আশেপাশে ভাঙ্গা ফুলের টব, ভাঙ্গা ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা বেসিন, অব্যবহৃত টায়ার, মুখ খোলা পানির ট্যাঙ্ক, প্লাস্টিকের প্যাকেট, পলিথিন এবং ঘরের আশেপাশে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন.১. ডেঙ্গুজ্বর কেন হয়?
উত্তর.এক ধরনের জীবাণু দিয়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। এডিস নামে এক ধরনের মশা এই রোগের জীবাণু বহন করে।
প্রশ্ন.২. কিভাবে এডিস মশা ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু ছড়ায়?
উত্তর.ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে কোন সাধারণ এডিস মশা (যে এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু বহন করছে না) কামড়ালে সেই এডিস মশাটিও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই মশা যখন আরেকজন সু্স্থ্য মানুষকে কামড় দেয় তখন সেও ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়।
প্রশ্ন. ৩. ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের ক্ষেত্রে কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
উত্তর.
সাধারণত শহর অঞ্চলে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
যেসব অঞ্চলে গরম বেশি সেখানকার মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
যারা আগেও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন.৪. ডেঙ্গুজ্বর ভালো হতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর.ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন.৫. ডেঙ্গুজ্বরে কি ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর.ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত: যেসব জটিলতা দেখা দিতে:
জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরের কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত কোন কোন বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ক্লান্তিবোধ, অবসন্নতা দেখা দেয়।
মারাত্মক ডেঙ্গুজ্বর থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে। এর ফলে যে সমস্যা গুলো হতে পারে সেগুলো হলো-অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,শক এমনকি এ ধরনের সমস্যা থেকে মৃত্যু।
অনেকসময় সু্স্থ্য হলেও অনেকের যকৃত, রক্তনালী এবং মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ
www.infokosh.gov.bd
search tags: dengue fever, dengu fever, dengu jor keno hoy, dengue jorer lokkhon, dengue jorer chikitsha, dengu hole ki korbo, dengue jor hole koronio, adis mosha theke bachar upay.