Saturday, August 29, 2015

মাথা ঘোরা রোগের সমাধান


অনেকেই মাথা ঘোরা বা ভার্টিগো সমস্যায় ভোগেন। এটি সাময়িক হতে পারে আবার বেশ কিছু অসুখের কারণেও হতে পারে। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খান। লিখেছেন আতিউর রহমান
মাথা ঘোরা বা ভার্টিগো এক ধরনের অনুভূতি, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করে সে নিজে ঘুরছে অথবা তার চারপাশের সব কিছু ঘুরছে।
যদিও ভার্টিগো শব্দটির আভিধানিক অর্থ উচ্চতাভীতি।
মাথা ঘোরার কারণ
হঠাৎ দুঃসংবাদ শুনলে, বেশি উঁচুতে উঠলে, গাড়িতে বা জাহাজে ভ্রমণ করলে, চোখের বেশ কিছু সমস্যায়, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আর মস্তিষ্কে টিউমার হলেও মাথা ঘুরতে পারে।
মাথা ঘোরার সাধারণ কারণের মধ্যে একটি বিপিপিভি বা বিনাইন পার-অক্সিসমাল পজিশনাল ভার্টিগো, যাতে মাথা একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে নিলে মাথা ঘোরার অনুভূতি হয়। অবস্থান পরিবর্তন করলে তা সেরে যায়। সাধারণত ক্যালসিয়ামযুক্ত কিছু পাথরসদৃশ ক্ষুদ্র কণা অন্তঃকর্ণের নালিতে ঢুকে গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কণা সরে গেলে বা বের হয়ে গেলে ভার্টিগোর অনুভূতি থাকে না। তবে ক্যালসিয়ামের পাথর ছাড়াও বিপিপিভি হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে।
মাথা ঘোরার আরেকটি সাধারণ কারণ মিনার ডিজিজ। এটা মধ্যকর্ণের অসুখ। এখানে কোনো কারণে তরল, পুঁজ বা পানি জমা হলে মাথা ঘোরার অনুভূতির সঙ্গে কানে ঝিনঝিন শব্দ হয় এবং শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়।
কানের আরেকটি অসুখেও মাথা ঘোরে, যার নাম ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস বা ল্যাবেরিন্থাইটিস। এটা অন্তঃকর্ণের সমস্যা, সাধারণত ভাইরাসজনিত ইনফেকশন থেকে হয়। এ ধরনের ইনফেকশনে অন্তঃকর্ণের ভেতরে থাকা স্নায়ুর প্রদাহ হয়।
এ ছাড়া মাথা ঘোরার আরো কারণের মধ্যে আছে-
* ঘাড়ে বা মাথায় আঘাত
* মাইগ্রেন
* ব্রেইন স্ট্রোক
* কানের ভেতরে আঘাত।

লক্ষণসমূহ
ভার্টিগোর লক্ষণ কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। একবার সেরে আবারও হতে পারে। কারো কারো বারবার হতে পারে। লক্ষণের মধ্যে আছে-
* নিজে ঘোরার অনুভূতি
* চারপাশের সব কিছু ঘোরার অনুভূতি
* কাত হয়ে পড়ে যাওয়া
* কোনো কিছু ভীষণভাবে চেপে ধরেছে এমন অনুভূতি
* দাঁড়িয়ে থাকার নিয়ন্ত্রণ হারানো
* মনে হচ্ছে একদিকে কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে
* বমি বমি ভাব
* চোখের মণির অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া বা নিস্টাগম্যাস
* মাথাব্যথা
* ঘেমে যাওয়া
* কানে ঝিনঝিন বা শনশন শব্দ হওয়া, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া।
উল্লেখ্য লক্ষণ হিসেবে সবসময় 'মাথা ঘোরা' নাও থাকতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
মূলত রোগ নির্ণয়ে রোগীর প্রদত্ত বর্ণনাই বেশি ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসক সাধারণত রোগীর কাছে জানতে চান কখন এবং কিভাবে প্রথম মাথা ঘোরার অনুভূতি হলো, কত দিন পর পর মাথা ঘোরার সমস্যা হয়, হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হয় কি না, কোনো বিশেষ কারণে বা শব্দে বা কাজ করতে গেলে মাথা ঘোরে কি না, কানে ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না। কখনো কখনো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়। এগুলোর মধ্যে আছে টেস্ট ফর নিস্টাগম্যাস, ডিক্স হলপিক টেস্ট, রমবার্গ টেস্ট ইত্যাদি।

মাথা ঘোরার চিকিৎসা
* সাধারণত বিশ্রাম নিলে সাময়িক সময়ের ভার্টিগো সেরে যায়। কোনো ওষুধ ছাড়াই সেরে যায়। যেগুলো এমনিতেই সেরে যায় না তার চিকিৎসা নির্ভর করে কারণের ওপর।
* বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের সাহায্যে মাথা ঘোরার সমস্যা ঠিক করা যায়। আমাদের দেশে এ ওষুধগুলো সহজলভ্য। এগুলোর মধ্যে আছে স্টেমিটিল, ভার্গন, সিনারন, ভিসার্ক, মিনারিল ইত্যাদি।
* ভ্রমণসংক্রান্ত ভার্টিগোতে বা যখন বমি বমি ভাব থাকে তখন বমি প্রতিরোধক ওষুধও প্রয়োগ করা হয়।
* যদি ইনফেকশন, প্রদাহ ইত্যাদি থেকে ভার্টিগো হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক, কখনো কখনো স্টেরয়েড ওষুধও দেওয়া হয়।
* মধ্যকর্ণে পানি জমার চিকিৎসায় অনেক সময় ডাইইউরেটিক ওষুধও ব্যবহৃত হয়।
* কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে।
* অনেক সময় সার্জারি বা অস্ত্রোপচারেরও দরকার হয়।

কখন মাথা ঘোরা বিপদের কারণ?
নিচের লক্ষণগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* কানে কম শোনা
* কানে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
* মাথায় তীব্র ব্যথা
* বমি হওয়া বা সব সময় বমি বমি ভাব হওয়া
* কম দেখা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
মাথা ঘোরা থেকে মুক্ত থাকতে
* অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে
* ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে
* পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে
* কানের যেকোনো সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
  - আতিউর রহমান

তথ্যসূত্রঃ
http://chandpur-barta.com

search tags: matha ghurar karon, matha ghura roger chikitsha, matha ghorar oushudh, ki shomossha hole matha ghure, hotath matha ghurle ki korbo.

2 comments:



  1. লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে। তবে এরকম আরো একটি লেখা পড়েছিলাম এখানে>
    http://muktomoncho.com/archives/113

    ReplyDelete