শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধই তার জন্য যথেষ্ট। আর কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই। দুধ ঠিকমতো না এলে বা শিশু দুধ না পেলে অনেক মা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এ রকমটি মনে হলে কী করবেন? তাঁর আগে আসুন জেনে নিই কী কী কারণে বুকের দুধ কমে যেতে পারে।
l মায়ের বুকে দুধ তৈরি হওয়া একটা ‘ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই সিস্টেম’ অনুসরণ করে। অর্থাৎ শিশু যত দুধ টানবে, তত মায়ের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি উদ্দীপ্ত হয়ে বেশি বেশি প্রলেকটিন হরমোন তৈরি করবে। তত বেশি দুধ উৎপাদিত হবে। বুকের দুধ তৈরির একমাত্র উদ্দীপক বা স্টিমুলাস হলো শিশুর দুধ টানা। তাই যে মায়েরা একেবারে শুরু থেকেই বারবার দুধ দেননি, তাঁদের এই উৎপাদনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
l বুকের দুধ খাওয়ানোর ভুল পদ্ধতিও দুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। বিশেষ করে নতুন মায়েরা এই সমস্যায় ভোগেন। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মাথা ও কাঁধ সমান্তরালে থাকবে, বাঁকা হবে না, দুধের বোঁটার চারপাশে এক ইঞ্চি পর্যন্ত পুরোটা শিশুর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ব্যক্তি, চিকিৎসক বা নার্সের সাহায্য নিন।
l অনেক সময় মা ভাবেন যে দুধ কম হচ্ছে, কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। লক্ষ রাখুন, শিশু সপ্রতিভ আছে কি না, ওজন বাড়ছে কি না। নবজাতক শিশু দিনে সাত-আটবার প্রস্রাব করে এবং দুই-তিনবার মলত্যাগ করে। দুধ খাওয়ার সময় খেয়াল করুন দুধ গিলে ফেলার শব্দ হচ্ছে কি না বা ঠোঁটের কোণে মুখের ভেতর দুধ দেখা যাচ্ছে কি না। অনেক সময় শিশু দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, এই সময়ও তাকে দুধ দিতে হবে। প্রয়োজনে কানের পেছনে বা পায়ের নিচে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগাতে হবে। যথেষ্ট দুধ তৈরি করতে হলে দিনে অন্তত আট থেকে ১০ বার (দিনের বেলা দুই ঘণ্টা পরপর ও রাতে ৪ ঘণ্টা পরপর) দুধ দিতে হবে।
l মাকে প্রচুর পানি, তরল, দুধসহ আমিষসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সময় মায়ের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ক্যালরি দরকার হয়। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।
l কিছু কিছু ওষুধ, যেমন ডাইউরেটিক, সিউডোএফিড্রিন বা ইস্ট্রোজেনসমৃদ্ধ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মায়ের অসুস্থতা, থাইরয়েডের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি, প্রসব-পরবর্তী বেশি রক্তক্ষরণ, রক্তশূন্যতা এবং পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাও দুধ কম হওয়ার জন্য দায়ী। নিকোটিন ও অ্যালকোহলও এ জন্য দায়ী।
l শিশুর যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পেতে হলে জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুধ দিতে হবে, এটি মায়ের মস্তিষ্কে আরও দুধ তৈরির উদ্দীপনা জাগাবে। সময় বেঁধে নয়, বারবার এবং যতবার শিশু চায়, ততবারই দুধ দিতে হবে। ধৈর্য ধরে খাওয়াতে হবে, আগেই সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। দুধ পাচ্ছে না বলে ফমুর্লা বা কৃত্রিম দুধ কিছুতেই দেবেন না, এতে মায়ের দুধ আরও কমে যাবে এবং শিশুর বুকের দুধ টানার অভ্যাসটাও চলে যাবে। শিশুর কান্না থামাতে মুখে পেসিফায়ার দেবেন না, এতে নিপল কনফিউশন হয়। কখনো কখনো পাম্প ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়, এতে ব্রেস্ট স্টিমুলেশন হওয়ার পাশাপাশি পাম্প করা দুধ প্রয়োজনে বাটি-চামচ দিয়ে শিশুকে দেওয়া যায়। চিকিৎসকেরা দুধ উৎপাদন বাড়াতে ডমপেরিডন বা মেটাক্লোপ্রামাইড জাতীয় কিছু ওষুধ ব্যবহার করেন, সে বিষয়ে পরামর্শ নিন।
সাধারণত একজন সুস্থ মায়ের বুকে দুধ না আসার তেমন কোনো কারণ নেই। এ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা না করে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের আর কোনোই বিকল্প নেই।
লেখক: তানজিনা হোসেন
চিকিৎসক
search tags:
shishu buker dud na pele ki korbo
buker dudher bikolpo
baccar buker dud na pele
l মায়ের বুকে দুধ তৈরি হওয়া একটা ‘ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই সিস্টেম’ অনুসরণ করে। অর্থাৎ শিশু যত দুধ টানবে, তত মায়ের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি উদ্দীপ্ত হয়ে বেশি বেশি প্রলেকটিন হরমোন তৈরি করবে। তত বেশি দুধ উৎপাদিত হবে। বুকের দুধ তৈরির একমাত্র উদ্দীপক বা স্টিমুলাস হলো শিশুর দুধ টানা। তাই যে মায়েরা একেবারে শুরু থেকেই বারবার দুধ দেননি, তাঁদের এই উৎপাদনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
l বুকের দুধ খাওয়ানোর ভুল পদ্ধতিও দুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। বিশেষ করে নতুন মায়েরা এই সমস্যায় ভোগেন। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মাথা ও কাঁধ সমান্তরালে থাকবে, বাঁকা হবে না, দুধের বোঁটার চারপাশে এক ইঞ্চি পর্যন্ত পুরোটা শিশুর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ব্যক্তি, চিকিৎসক বা নার্সের সাহায্য নিন।
l অনেক সময় মা ভাবেন যে দুধ কম হচ্ছে, কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। লক্ষ রাখুন, শিশু সপ্রতিভ আছে কি না, ওজন বাড়ছে কি না। নবজাতক শিশু দিনে সাত-আটবার প্রস্রাব করে এবং দুই-তিনবার মলত্যাগ করে। দুধ খাওয়ার সময় খেয়াল করুন দুধ গিলে ফেলার শব্দ হচ্ছে কি না বা ঠোঁটের কোণে মুখের ভেতর দুধ দেখা যাচ্ছে কি না। অনেক সময় শিশু দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, এই সময়ও তাকে দুধ দিতে হবে। প্রয়োজনে কানের পেছনে বা পায়ের নিচে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগাতে হবে। যথেষ্ট দুধ তৈরি করতে হলে দিনে অন্তত আট থেকে ১০ বার (দিনের বেলা দুই ঘণ্টা পরপর ও রাতে ৪ ঘণ্টা পরপর) দুধ দিতে হবে।
l মাকে প্রচুর পানি, তরল, দুধসহ আমিষসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সময় মায়ের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ক্যালরি দরকার হয়। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।
l কিছু কিছু ওষুধ, যেমন ডাইউরেটিক, সিউডোএফিড্রিন বা ইস্ট্রোজেনসমৃদ্ধ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মায়ের অসুস্থতা, থাইরয়েডের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি, প্রসব-পরবর্তী বেশি রক্তক্ষরণ, রক্তশূন্যতা এবং পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাও দুধ কম হওয়ার জন্য দায়ী। নিকোটিন ও অ্যালকোহলও এ জন্য দায়ী।
l শিশুর যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পেতে হলে জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুধ দিতে হবে, এটি মায়ের মস্তিষ্কে আরও দুধ তৈরির উদ্দীপনা জাগাবে। সময় বেঁধে নয়, বারবার এবং যতবার শিশু চায়, ততবারই দুধ দিতে হবে। ধৈর্য ধরে খাওয়াতে হবে, আগেই সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। দুধ পাচ্ছে না বলে ফমুর্লা বা কৃত্রিম দুধ কিছুতেই দেবেন না, এতে মায়ের দুধ আরও কমে যাবে এবং শিশুর বুকের দুধ টানার অভ্যাসটাও চলে যাবে। শিশুর কান্না থামাতে মুখে পেসিফায়ার দেবেন না, এতে নিপল কনফিউশন হয়। কখনো কখনো পাম্প ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়, এতে ব্রেস্ট স্টিমুলেশন হওয়ার পাশাপাশি পাম্প করা দুধ প্রয়োজনে বাটি-চামচ দিয়ে শিশুকে দেওয়া যায়। চিকিৎসকেরা দুধ উৎপাদন বাড়াতে ডমপেরিডন বা মেটাক্লোপ্রামাইড জাতীয় কিছু ওষুধ ব্যবহার করেন, সে বিষয়ে পরামর্শ নিন।
সাধারণত একজন সুস্থ মায়ের বুকে দুধ না আসার তেমন কোনো কারণ নেই। এ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা না করে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের আর কোনোই বিকল্প নেই।
লেখক: তানজিনা হোসেন
চিকিৎসক
search tags:
shishu buker dud na pele ki korbo
buker dudher bikolpo
baccar buker dud na pele
No comments:
Post a Comment