জ্বর নেই, কফ বের হওয়া নেই, বুকে ঘড়ঘড় নেই—কিন্তু যখন-তখন খুক খুক কাশি। বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। একে বলা হয় ড্রাই কফ বা শুকনো কাশি। যার অর্থ, কাশির সঙ্গে কখনো কফ বেরোয় না, কিন্তু একটা অস্বস্তি গলায়-বুকে লেগেই থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে বা বুকের এক্স-রে করে কিছুই পাওয়া যায় না। কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই বারবার শুকনো কাশির কারণ ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি নয়, বরং অন্য কিছু। আর এই অন্য কিছুটা হয়তো এতই সাধারণ যে নজরেই আসছে না। সঠিক কারণটি বুঝতে হলে দরকার মনোযোগের সঙ্গে কাশির ধরন লক্ষ করা।
কাশির ধরনটি বুঝুন?
খেয়াল করুন, কাশিটা কি নতুন, না এর আগেও প্রায়ই জ্বালিয়েছে আপনাকে? মৌসুমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কি না। এমন যদি হয় যে শীতে, ঠান্ডায়, গরমে, বর্ষায় বা ধুলাবালিতে এর প্রকোপ বেড়ে যায়, তবে ধরে নিতে পারেন যে এটি অ্যালার্জিজনিত। লক্ষ করুন, আপনার বাড়িতে বা কাজের পরিবেশে এমন কিছু আছে কি না, যা অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ায়। যেমন: হয়তো ধুলোমাখা কার্পেট, আলো-বাতাসহীন ভাপসা ঘর, এমনকি পোষা প্রাণী, পাখি বা ফুলগাছের রেণু। হয়তো ঘরের শীতাতপনিয়ন্ত্রণের যন্ত্রই আপনার সহ্য হয় না, অথবা সইতে পারেন না বেশি গরম ও ঘাম। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায়ও অনেকের কাশি বাড়ে। এসবের যেকোনো কিছুই আপনার কাশির জন্য দায়ী হতে পারে। পরিবারে বা বংশে হাঁপানি বা অ্যালার্জির ইতিহাস এ ধারণাকে মজবুত করবে। একধরনের হাঁপানিই আছে, যেখানে শ্বাসকষ্ট না হয়ে স্রেফ খক খক কাশি দেখা যায়; একে বলে কফ ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমা। ধুলাবালি বা ঠান্ডা এড়িয়ে চলা, অ্যালার্জির ওষুধ বা ইনহেলার—এই হলো এর চিকিৎসা।
আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন, তবে হয়তো স্মোকার কফ হচ্ছে। তামাক শ্বাসঝিল্লিকে ক্রমাগত ব্যাহত করছে বলেই কাশি উঠছে। লক্ষ করুন, স্বাভাবিক সময়ের কাশির েচয়ে এই নতুন কাশি একটু অন্য ধরনের কি না। কিংবা হঠাৎ তীব্রতায় বা ধরনে পাল্টে গেছে কি না। কারণ, ধূমপায়ীদের কফ হঠাৎ আচরণ পরিবর্তন করলে একটু সতর্ক হওয়া চাই বটে; ফুসফুসের ক্যানসার ধূমপায়ীদেরই বেশি হয়।
যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের বছরে কয়েকবার কাশি-শ্বাসকষ্ট-জ্বর মিলিয়ে অসুস্থতা হতে পারে। হয়তো তাঁরা ক্রনিক ব্রংকাইটিসে ভুগছেন। বিষয়টি নজরে আনুন ও যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করুন। কেননা এটি জটিলতর রূপ নেবে ক্রমেই। এক মাসের বেশি কাশি, সঙ্গে ঘুষঘুষে জ্বর, ওজন হ্রাস, অরুচি, কাশির সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যক্ষ্মা বা ক্যানসারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জেনে অবাক হবেন যে গ্যাস্ট্রিকের কারণেও অনেক সময় কাশি হয়। পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপর দিকে উঠে এলে কাশি উঠতে পারে। যাঁদের সব সময় সর্দি লেগে থাকে, তাঁদের নাকের পেছন দিকে ইরিটেশন হয় বলে কাশি হতে পারে, একে বলে পোস্ট নাসাল ড্রিপ। এ ছাড়া কিছু ওষুধ অনেক সময় কাশির জন্য দায়ী হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো রক্তচাপের জন্য এসিই ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ। চিকিৎসককে আপনার ওষুধগুলো সম্পর্কে জানান। হৃদ্রোগের কারণেও অনেক সময় কাশি হয়। এ বিষয়েও সতর্ক থাকুন।
কাশি যে কারণেই হোক, এর কারণ নির্ণয় জরুরি। তাই শুকনো কাশিকেও গুরুত্ব দিন।
- মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল|
search tags:
khushkhushe kashi hole ki korbo
shukna kashi hole ki korbo
kashi,kasi hole ki korbo
kash bondh korar upay
কাশির ট্যাবলেট এর নাম
ReplyDelete