ডায়াবেটিস কিঃ-
ডায়াবেটিস একটি মেটাবলিক ডিজিজ। যেসব রোগীর রক্তে ব্লাড সুগার কিংবা গ্লুকোজ এর পরিমান বেশি পাওয়া যায় তাদের ডায়াবেটিস হয়।
হজম হওয়া খাদ্য শরীরের বল ও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, আর এই সিস্টেম টাকেই মেটাবলিজম বলে। আমরা যেসব খাবার গ্রহন করি তার বেশিরভাগই গ্লূকোজে রুপান্তরিত হয়। গ্লুকোজ রক্তের মধ্যে চিনি রুপে মিশে থাকে যা কিনা আমাদের শরীরের জ্বালানী বলা চলে।
ইনসুলিন কিঃ-
ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন যা প্যানক্রিজ নামক অন্ত্র থেকে তৈরি হয়। খাবার গ্রহন করার পরে রক্তে গ্লুকোজের উপস্থিতি বেড়ে যায়। ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে এই গ্লুকোজকে আমাদের দেহের কোষে কোষে পৌছে দেওয়া। যখন গ্লুকোজ কোষে পৌছে যায় তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর রক্তে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না অথবা শরীর ইনসুলিনের কার্যকারীতায় সাড়া দেয় না। ফলে দেহে বিদ্যমান অতিরিক্ত গ্লুকোজ কোনো কাজে আসে না। দরকারি গ্লুকোজ প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। সেহেতু শরীর তার দরকারি শক্তি পায় না।
তিন ধরনের ডায়াবেটিস রোগ দেখতে পাওয়া যায়। নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
১। টাইপ টু ডায়াবেটিসঃ
টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয়না অথবা দেহের কোষ গুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ে।
সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জন রোগী টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। মোটা মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষের ও এ ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে। আজে বাজে খাবার খেলে এই সমস্যা পেয়ে বসতে পারে। চিনিজাতীয় খাবারের প্রতি অনুরাগ কমাতে হবে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। বৃদ্ধ বয়সে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হবার নির্দিষ্ট কারন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা সঠিক সমস্যাদি চিহ্নিত করতে না পারলেও কিছু জিনিস অনুমান করেন- বৃদ্ধ বয়সে শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যায়, শরীর চর্চা হয়না, শরীর মোটা হয়ে যায়, যার দরুন অনেককে ডায়াবেটিস এ পেয়ে বসে। যেসব পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম থাকে তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। স্কটল্যান্ড এর এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির রিসার্সাররা বলেন, শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ আর টেস্টোস্টেরন লেভেল একি সূত্রে গাঁথা।
টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের উপায়ঃ
১। দেহের ওজন কমাতে হবে।
২। সুষম খাবার খেতে হবে।
৩। পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করতে হবে।
৪। প্রায়শ রক্তের গ্লুকোজ লেভেল মেপে দেখতে হবে।
৫। যেহেতু টাইপ টু ডায়াবেটিস একটি প্রগ্রেসিভ ডিজিজ সেহেতু ধীরে ধীরে এটি প্রকট হয়ে যায়। তাই শেষমেশ ইন্সুলিন ইনজেকশন কিংবা ইন্সুলিন ট্যাবলেট গ্রহন করতে হবে।
৬। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি করলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ডায়াবেটিসের মাত্রা প্রায় ২১% এ কমে আসে।
২। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসঃ
শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উতপন্ন না হলে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হয়। সাধারণত কিশোর বয়সে অথবা চল্লিশ বছর বয়সের আগেই এই টাইপ ডায়াবেটিস হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত শতকরা ১০ জন রোগী টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস এ সংক্রমিত হয়।
এই ধরনের রোগীদের বাকি জীবন ইঞ্জেকশন নিতে হয়। ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণের জন্য রেগুলার ব্লাড টেস্ট করতে হয়। এছাড়া সবসময় স্পেশাল ডায়েট অনুসরন করতে হয়।
৩। গ্যাস্টেসেনাল ডায়াবেটিসঃ
মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে এই রোগ হতে পারে। এসময় কিছু কিছু মহিলাদের রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যায়, পর্যাপ্ত ইনসুলিন উতপন্ন না হওয়ার কারনে দেহের কোষে কোষে গ্লুকোজ পৌছে না, যার দরুন রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজের উপস্থিতিতে এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। শরীরচর্চা এবং ডায়েট করে গ্যাস্টেসেনাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১০%-২০% রোগী কে ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন পড়ে। এ ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করা না হলে জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষতি হয়। শিশুর আকৃতি ও ওজন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি এনিমেল ফ্যাট ও কোলোস্টেরল গ্রহন করলে এর উপস্থিতিতে গ্যাস্টেসেনাল ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
★ প্রি ডায়াবেটিসঃ
বেশির ভাগ টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক অবস্থায় প্রিডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এ সময় রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেশী থাকে কিন্তু এর মাত্রা ততটা বেশি হয় না যাতে করে পরীক্ষা করলে ডায়াবেটিস ধরা পড়বে। দেহের কোষ তখন ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকে। রোগের প্রাথমিক এই দশাতেও কিন্তু শরীরের ক্ষতি হয়ে থাকে।
সূত্রঃ ওয়েব এম ডি।
মায়োক্লিনিক।
ডায়াবেটিকস.অর্গ।
search tags: ডায়াবেটিসের চিকিৎসা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের উপায়, ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, ডায়াবেটিস কিভাবে ও কেনো হয়, ডায়াবেটিস হলে কি কি খেতে হবে, diabetis er chikitsha, diabetis er medicine, diabetes control er upay, dayabetis komanor upay, diabetis keno hoy, diabetis kivabe hoy, diabetis hole ki ki khete hobe, type one diabetis ki, type two diabetis ki, prediabetis ki, insulin kivabe nebo, insulin ki